Friday, April 27, 2018

শবে বরাতে তৈরি করুন ৭ দেশের মিষ্টান্ন


আমাদের দেশে শবে বরাতে ধর্মীয় ইবাদতের পাশাপাশি আর কিছু হোক বা না হোক বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়। গরিব মানুষ, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে দেয়ার জন্য। এই দিন বিভিন্ন রকমের হালুয়া, মিষ্টি, পায়েস, সন্দেশ, রুটি আরও নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হয়।এবার যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে আপনি আপনার শবে বরাতের রান্না রাখতে পারেন সাতটি দেশের ভিন্ন স্বাদের মিষ্টি খাবার। যা আপনার রেগুলার সব ধরনের খাবারকে পেছনে ফেলে দিবে। আসুন তাহলে এবার শবে বরাতে তৈরি করে ফেলি সাত দেশের ভিন্ন স্বাদ।

টার্কিশ ডিলাইট

১. টার্কিশ ডিলাইট

উপকরণ

কাস্টর সুগার ৮০০ গ্রাম

লেবুর রস ২ টবিল চামচ

কর্নফ্লাওয়ার ১৪০ গ্রাম

ক্রিম অফ টারটার গুঁড়ো দেড় চা চামচ (এর বিজ্ঞানের নাম পটাসিয়াম বিটরেট্রেট, টার্টেট বা টার্টরিক এসিড (তাই এই নাম)।

গোলাপ জল ২ টেবিল চামচ

গোলাপি ফুড কালার

সাইট্রিক এসিড গুঁড়ো ১ চা চামচ

আইসিং সুগার পরিমাণ মতো

প্রণালী: কাস্টর সুগার এবং দেড় কাপ পানি একটি নন-স্টিক প্যানে নিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফুটে ওঠার পর লেবুর রস দিন। ৩০ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিন অথবা ক্যান্ডি থার্মোমিটার বা সুগার থার্মোমিটারে ১১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আসার পর চুলা বন্ধ করে দিন।

আরেকটি পাত্রে কর্নফ্লাওয়ার, ক্রিম অফ টারটার এবং দুই কাপ পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার একটি ইলেকট্রিক বিটার ব্যবহার করুন। বিট করতে থাকলে মিশ্রণ ঘন এবং আঠালো হয়ে আসবে। এর মাঝে চিনির মিশ্রণটি দিয়ে দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন।

এবার খুব ধৈর্য ধরে রান্না করতে হবে। খুব কম আঁচে নাড়তে থাকুন মিশ্রণটিকে। ক্রমাগত নাড়ুন নয়তো পুড়ে যেতে পারে। প্রায় ঘণ্টাখানেকের মাঝে মিশ্রণটি সোনালি হয়ে আসবে এবং পাত্রের মাঝামাঝি অংশে ঘন হয়ে আসবে। এ সময়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন পাত্রটি।

এবারে এতে রং ও ফ্লেভার যোগ করার পালা। প্রথমে গোলাপজল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর নিজের ইচ্ছেমত রং দিয়ে দিন, হালকা বা গাড় রং করতে পারেন। সবার শেষ সাইট্রিক এসিড ডিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

একটি ট্রেতে বেকিং পেপার দিয়ে এর ওপরে তেল মাখিয়ে নিন। তাতে মিশ্রণটি ঢেলে নিন এবং নেড়েচেড়ে সমান করে নিন। এবার এটাকে রেখে দিন। সারারাত রেখে দিতে পারলে ভালো হয়।

পরের দিন দেখবেন এটা শক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু, কিছুটা চটচট করছে। কাটিং বোর্ডের ওপর আইসিং সুগার ছড়িয়ে এর ওপর ট্রে থেকে নামিয়ে নিন পুরোটা। একটি ছুরিতে তেল মাখিয়ে পছন্দ মতো আকৃতিতে কেটে নিন। কাটা টুকরোগুলোকে আবারও আইসিং সুগারে গড়িয়ে নিন।

ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল মজাদার টার্কিশ ডিলাইট। সাথে সাথে উপভোগ করতে পারেন অথবা প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের বাড়িতেও পাঠাতে পারেন সুন্দর ও সুস্বাদু এই মিষ্টি।

ফিলিপিনো ‘বুকো পানদান’

২. ফিলিপিনো ‘বুকো পানদান’

উপকরণ:

সাবু দানা ২ কাপ

কনডেন্সড মিল্ক ১টা

ডানো ক্রিম ১টা

হাফ কেজি তরল দুধ (ঘন করে ১ কাপ করে নিতে হবে)

ডাব নারিকেল এর শাঁস (নারিকেল এর শাঁস খুব নরম বা খুব শক্ত হবে না ও চারকোনা করে কাটা)

জেলাটিন জমিয়ে ৪ কোনা করে কাটা।

আঙুর, আম, বা পছন্দের কোনো ফল (চারকোনা করে কাটা দিতে পারেন-ইচ্ছামত)

পছন্দ মতো ফুড কালার

প্রণালী:

সাবু দানা পানিতে সিদ্ধ করে নিন। খেয়াল রাখবেন যাতে গলে না যায়। এই সময় ফুড কালার মিশিয়ে নিন।

পানি ঝরিয়ে ১টা বাটিতে নিয়ে কনডেন্স মিল্ক, ক্রিম, ঘন দুধ, ফল, নারিকেলে শাঁস ও জেলাটিন সব একসাথে মিক্স করে নিন।

এবার গ্লাস বা বাটিতে করে সুন্দর করে সাজিয়ে ২ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন মজাদার ফিলিপিনো খাবার বুকো পানদান।

তুর্কিস্তানের রেভানি

৩. তুর্কিস্তানের রেভানি

উপকরণ:

ডোয়ের জন্য

দই ১ কাপ

চিনি ১ কাপ

কমলার খোসা কোরানো ১টি

ময়দা ১ কাপ

সুজি ১ কাপ

কোরানো নারকেল আধা কাপ

তেল আধা কাপ

ডিম ৩টি

বেকিং পাউডার ২ চা চামচ

ভ্যানিলা এসেন্স ২ চা চামচ

সিরাপের জন্য

চিনি সাড়ে ৩ কাপ

পানি সাড়ে ৩ কাপ

লেবুর রস ২ টেবিল চামচ

প্রণালী: প্রথমেই পানিতে চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে চিনির সিরাপ তৈরি করে ফেলুন। এতে লেবুর রস দিয়ে হালকা ঘন চিনির সিরাপ তৈরি করে আলাদা করে রাখুন।

এরপর একটি বড় বোলে ডিম ভেঙে চিনি দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। তারপর এতে দই ও তেল দিন। আবারো ভালো করে মিশিয়ে নিন।

ভালো করে মেশানো হলে কোরানো নারকেল, সুজি দিয়ে দিন এবং ময়দা ও বেকিং পাউডার ছেঁকে দিয়ে ভালো করে মেশাতে থাকুন। ভ্যানিলা এসেন্স ও কোরানো কমলালেবুর খোসা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে কেকের ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন।

একটি বড় কেক মোল্ড বা বড় ওভেনপ্রুফ ট্রে বা ছড়ানো বাটি নিয়ে বাটার দিয়ে গ্রিজ করে নিন এবং এতে মিশ্রণটি ঢেলে দিন।

ওভেন ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে প্রি হিট করে নিয়ে ট্রেটি ওভেনে দিন এবং ১০ মিনিট বেক করে নিন। এরপর ১৮০ ডিগ্রীতে হিট কমিয়ে এনে ৩০-৩৫ মিনিট বেক করুন। কেকের মতোই টুথপিক দিয়ে দেখে নিন ভেতরে হয়েছে কিনা। এরপর বের করে নিন ওভেন থেকে।

এরপর মাঝে যোগ চিহ্নের মতো করে কেটে ঠাণ্ডা হয়ে আসা সিরাপ দিয়ে দিন যাতে ভেতরে সিরাপ ঢুকতে পারে। খানিকক্ষণ এভাবে রেখে সিরাপ শুষে নিতে দিন।

তারপর পছন্দের আকারে কেটে উপরে বাদাম কুচি বা কিশমিশ ছিটিয়ে পরিবেশন করুন। চাইতে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেতে পারেন স্বাদে অসাধারণ এই হালুয়া ‘রেভানী’।

আফগানি ‘মালিদা’

৪. আফগানি ‘মালিদা’

উপকরণ:

মাঝারি আকারের আটার রুটি ৮টি,

গুঁড় (কুচি করে কাটা) ১/৪ কাপ,

এলাচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ,

বাদাম ১/২ কাপ,

খেজুর কুচি করে কাটা ১/৪ কাপ,

ঘি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালী:

প্রথমে রুটিগুলো ভালো করে হাতে ছিঁড়ে ছোট ছোট পিস করে নিন।

এরপর একটি গ্রাইন্ডার বা ফুড প্রসেসরে দিয়ে রুটি আরও ছোটো করে গুঁড়ো ধরনের করে নিন। এতে প্রায় ৩ কাপ পরিমাণ রুটি হবে।

এরপর বাদাম গ্রাইন্ডারে দিয়ে ভেঙে নিন। চাইলে হামান দিস্তায় পিসে গুঁড়ো করে নিতে পারেন। খুব বড় হবে না আবার মিহি করেও ভেঙে নিতে হবে না।

একটি বড় বাটিতে বাদাম গুঁড়ো, খেজুর কুচি, এলাচ গুঁড়ো এবং গুঁড় খুব ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে নিন এবং আলাদা করে রাখুন।

এবার একটি প্যানে অল্প আঁচে ঘি গলিয়ে নিন এবং অল্প গরম হলেই প্রসেস করে রাখা রুটি দিয়ে ভালো করে ভাজতে থাকুন। রুটিগুলো প্রায় ৫-৭ মিনিট ভাজুন। এতে করে রুটির গুঁড়ো একটু মুচমুচে হবে।

ভাজা হয়ে গেলে এবার বড় বাটিতে রাখা বাদাম গুঁড়ের মিশ্রণে রুটির মিশ্রণ দিয়ে দিন এবং হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। যখন মিশ্রণ একটু ভেজা ভেজা হয়ে যাবে গুঁড়ের কারণে এবং আঠালো নরম ডো এর মতো তৈরি হবে তখন ছোটো ছোটো ভাগে ভাগ করে লাড্ডুর মতো বল তৈরি করুন।

একটির পর একটি বল তৈরি করে রেখে দিন। কিছুক্ষণ পড়েই নরম ভাব কেটে দিয়ে একটু শক্ত লাড্ডুর মতো তৈরি হয়ে যাবে। উপরে কাজু বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

শ্রীলঙ্কার এক টুকরো ডাবের পানি

৫. শ্রীলঙ্কার এক টুকরো ডাবের পানি

উপকরণ:

ডাবের পানি ৩ কাপ ডাবের নরম শাঁস ফালি করে কাটা ইচ্ছা মতো চিনি ১ টেবিল চামচ বা আপনার ইচ্ছা মতো চানা গ্রাস (আগার আগার) ১০ গ্রাম

প্রণালী:

.চায়না গ্রাস কুচি কুচি করে কেটে ১/২ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট।

.তারপর পানিসহ চুলায় বসিয়ে দিন অল্প আঁচে। নেড়ে গলিয়ে নিন।

.আরেকটি পাত্রে ডাবের পানি ও চিনি একসাথে গরম করুন।

.গরম হলেই গলিত চায়না গ্রাস ঢেলে দিন এবং নাড়তে থাকুন।

.পুরো চায়না গ্রাসটা ডাবের পানির সাথে মিশে গেলে নামিয়ে নিন।

.এবার গোলাকার পাত্র নিন পুডিং জমাবার জন্য। আগে থেকেই পাত্রে নারকেলের শাঁস সাজিয়ে রাখুন। .এবার ডাবের পানির মিশ্রণটি ঢেলে দিন।

.একটু ঠাণ্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন জমার জন্য।

.২ ঘণ্টা পর সাবধানে উল্টে পরিবেশন করুন।

ভারতীয় ‘চকোলেট সেহেরা’

৬. ভারতীয় ‘চকোলেট সেহেরা’

উপকরণ:

সুজি ১ কাপ

তরল দুধ ২ কাপ

চিনি ১/৩ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম বেশি করতে পারেন)

চকোলেট এসেন্স ৩ ফোটা

ডার্ক চকোলেট কুঁচি ১/২ কাপ অথবা কোকো পাউডার ২ চা চামচ

ঘি/গলানো মাখন ২ টেবিল চামচ

কাজু অথবা আলমন্ড বাদাম পরিমাণ মতো (সাজানোর জন্য)

প্রণালী: সুজি একটা শুকনা কড়াইতে নিয়ে হালকা আঁচে একটু ভেজে নিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

ননস্টিক পাত্রে দুধ, চিনি, কোকো পাউডার বা ডার্ক চকোলেট গলিয়ে (যেটা দিতে চান) ভালো মতো মিশিয়ে নিন। এবার ঠাণ্ডা করা ভাজা সুজি দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে কড়াইটা চুলায় দিন। মাঝারি আঁচে অনবরত নাড়তে থাকুন। যেন সুজি দলা পাকিয়ে না যায় এবং হাঁড়ির নিচে লেগে না যায়।

এবার সুজি সেদ্ধ হয়ে দুধ শুকিয়ে আঠালো হয়ে এলে ঘি/বাটার দিন ১ চামচ। কিছুক্ষণ নেড়ে মিশিয়ে নিন। এবার বাকি ঘি/বাটার দিন। আবার নাড়ুন। এবার তেল উঠে একটু ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে একটু ঠাণ্ডা করে নিন। তারপর সার্ভিং ডিসে সাজিয়ে উপরে বাদাম কুঁচি ছড়িয়ে দিন।

বাংলার স্বাদে আমৃত্তি

৭. বাংলার স্বাদে আমৃত্তি

উপকরণ:

মাশকলাই ডাল- ২ কাপ

কর্নফ্লাওয়ার- হাফ কাপ

চিনি- ৩ কাপ (সিরা করার জন্য)

খাবারের রং লাল/জর্দা রং- ১-২ ফোটা (ইচ্ছা)

ময়দা- হাফ কাপ

এলাচ- ১-২ টা

অমৃত্তি- তৈরির জন্য মোটা কাপড়, মাঝখানে ছোট ছিদ্র করা।

(এক্ষেত্রে আপনি সসের পট (পিপিং বয়াম) ব্যবহার করতে পারবেন)

তেল- পরিমাণ মতো (ভাজার জন্য)

তেজপাতা- ২-৩টা

চেপ্টা ফ্রাইপ্যান- বড় চওড়া হলে বেশি ভালো হয়।

প্রণালী: ডাল ৪-৫ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ডালটা ভালো করে পিষে নিয়ে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। (আপনি চাইলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন)। যখন পেস্টটা বানাবেন তখন হাফ কাপ পানি তাতে দিয়ে দিন। এবার একটা কড়াই নিয়ে তাতে অল্প করে পানি দিন।

কড়াইয়ের পানিতে এবার চিনি মেশান। চিনিটা জলের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে সিরা তৈরি করে নিন। (খেয়াল রাখবেন সিরা যেন খুব বেশি ঘন না হয়ে যায়। সিরাতে এবার পরিমাণ মতো এলাচ মেশান। অল্প আঁচে সিরা তৈরি করে নিন। যখন দেখবেন রসটা ঘন হয়ে গেছে তখন আলাদা করে সরিয়ে রাখুন)।

এবার একটা বাটিতে ডাল নিন। সেই বাটিতে ডালের সঙ্গে একে একে কনফ্লাওয়ার, ময়দা এবং রং মেশান। সব উপকরণ ভালো করে মাখুন। এবার একটা পিপিং বয়াম নিয়ে তাতে ডালের এই মিশ্রনটা ঢেলে নিন। কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল নিয়ে গরম করুন।

দেখবেন তেলটা ভালো মতো গরম হয়ে গেছে, তখন পিপিং বয়ামের সাহায্যে ডালের মিশ্রনটি কড়াইয়ে ছাড়তে থাকুন। এমনভাবে মিশ্রণটা দেবেন যাতে আমৃত্তির মতো দেখতে লাগে। ভালো করে আমৃত্তিগুলো ভাজুন। আমৃত্তিগুলো ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে, তেল থেকে ছেকে তুলে সেগুলোকে সিরায় ডুবিয়ে দিন। সিরায় ভালো করে ডুবিয়ে কিছুক্ষণ রেখে একটা প্লেটে আমৃত্তিগুলো নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রেসিপিটি প্রকাশিত হয়,  ২৭ এপ্রিল ২০১৮