Thursday, July 28, 2011

ইফতারের আয়োজন


সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারির পদগুলো চাই মুখরোচক ও পুষ্টিকর। নানা রকম ইফতারির রেসিপি দিয়েছেন কল্পনা রহমান। শরবতের রেসিপি দিয়েছেন নাসরিন আলম।

টক-মিষ্টি শরবত
উপকরণ: পানি ১ লিটার (ঠান্ডা), চিনি ১ কাপ, দুটি মালটার রস, লেবুর রস ১ কাপ, লবণ ১ চিমটি, বরফ প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: পানিতে চিনি ভিজিয়ে রাখতে হবে দু-তিন ঘণ্টা। মালটার রস, লেবুর রস ও লবণ মিলিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। ফ্রিজে ঠান্ডা করে বরফ দিয়ে পরিবেশ। শরবত বানিয়ে চার-পাঁচটি লেবু পাতা ধুয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে দিয়ে রাখতে হবে। ভালো স্বাদ হবে।

ঘুগনি
উপকরণ: মটরের ডাল ২৫০ গ্রাম, মরিচগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, আলু আধা কাপ, আস্ত জিরা আধা চা-চামচ, তেল সিকি কাপ, লবণ ১ চা-চামচ, খাবার সোডা ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, বিট লবণ ১ চা-চামচ, তেঁতুলের মাড় অর্ধেক কাপ, আলু (কিউব) ১ কাপ, ধনেপাতা ৪ টেবিল-চামচ, শসা (কিউব) ১ কাপ, টমেটো কিউব ১ কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা-চামচ।
প্রণালি: ডাল ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর লবণ ও সোডা দিয়ে সেদ্ধ করে পানি শুকিয়ে নামাতে হবে। আলু সেদ্ধ করে কিউব করে কেটে নিতে হবে। পাত্রে তেল দিয়ে আস্ত জিরার ফোড়ন দিয়ে মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, তেঁতুলের মাড় ও বিট লবণ দিয়ে কষাতে হবে। এবার সেদ্ধ ডাল ও আলু কিউব ঢেলে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে লবণ চেখে নামাতে হবে। ঠান্ডা হলে ঘুগনির মিশ্রণ টমেটো, শসা কিউব, ধনেপাতা কুচি, কাঁচা মরিচসহ একসঙ্গে আলতোভাবে মিশিয়ে পরিবেশন।

হালিম
উপকরণ: মুগ, বুট, মাষকলাই, মসুর ও চাল সব মিলিয়ে দেড় কেজি, গম (গুঁড়া) ১ কাপ, গরুর মাংস রান্না আধা কেজি, সুজি আধা কাপ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মুরগির মাংস রান্না আধা কেজি, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, আদা বাটা ১ চা-চামচ, সয়াবিন তেল ১ কাপ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, তেঁতুলের মাড় আধা কাপ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, বিট লবণ ২ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা কুচি ২-৩ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, লেবু পরিমাণমতো, লবণ প্রয়োজনমতো, ধনেপাতা কুচি আধা কাপ, এলাচ ৪টি, জর্দার রং আধা চা-চামচ, দারচিনি ৪টি ও এলাচ, দারচিনি, জায়ফল, জয়ত্রি একত্রে গুঁড়া ১ টেবিল-চামচ।
প্রণালি: গম তাওয়ায় ভেজে গুঁড়া করে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। গরু ও মুরগির মাংস আমরা যেভাবে বাসায় রান্না করি, সেভাবে রান্না করে নিতে হবে। মাংসের তেল ও ঝোলটা আলাদা করে নিতে হবে। একটি পাত্রে আধা কাপ তেল দিয়ে একমুঠো পেঁয়াজ লাল করে ভেজে এর ভেতর আলাদা করা ঝোল ও জর্দার রং গুলিয়ে দিতে হবে। ফুটে উঠলে নামানোর আগে আধা চা-চামচ গরম মসলাগুঁড়া দিতে হবে। হালিমের ওপরের গ্লেসটা এই মসলা দিয়ে হবে। মুগডাল সামান্য ভেজে নিতে হবে এবং সব ধরনের ডাল ও চাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ডাল ও চাল সেদ্ধ করে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিতে হবে। গরম মসলা দিতে হবে। ডাল সেদ্ধ হলে ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে নিতে হবে ও ডালের চার গুণ পানি দিতে হবে। ফুটে উঠলে ভিজানো গম ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নাড়তে হবে। না হলে নিচে লেগে যাবে। গম সেদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে এলে সব মাংস দিতে হবে। ডাল, গম ও মাংস ভালোভাবে মিশে গেলে বিট লবণ ও তেঁতুলের মাড়, ধনেপাতা ও বাগাড় দেওয়া ঝোল দিতে হবে। এবার সুজি ঠান্ডা পানি দিয়ে গুলিয়ে প্রয়োজনমতো দিতে হবে। সব শেষে থকথকে ভাব আনার জন্য পেঁয়াজের বাগাড় দিয়ে লবণ চেখে নামিয়ে লেবু, আদা কুচি, ধনেপাতা ও বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন।
বি.দ্র.:
১. যাঁদের ডাল খাওয়া নিষেধ তাঁরা শুধু গম ও সুজি দিয়েও হালিম বানিয়ে খেতে পারেন।
২. শুধু এক রকমের মাংস দিয়েও হালিম বানানো যায়।

নানা রকম তেলেভাজা
উপকরণ: বুটের ডাল ১ কাপ, কাঁচা মরিচ (আধা বাটা) ১ টেবিল-চামচ, হলুদ আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ চা-চামচ, মসুরের ডাল সিকি কাপ। লবণ পরিমাণমতো।
ব্যাটার তৈরি: ক. দুই রকমের ডাল ৬-৭ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পরে মিহি করে বেটে নিতে হবে এবং ভালোভাবে ফেটাতে হবে। ফেটা হলে লবণ, হলুদ, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে হালকা হাতে আলতোভাবে মেশাতে হবে। এবার গরম তেলে ফুলুরি ভাজতে হবে।
কিমা পাকোড়া: এক কাপ কিমা ২ টেবিল-চামচ পেঁয়াজ, আদা ও রসুন আধা চা-চামচ করে, কাঁচা মরিচ কুচি ২ টেবিল-চামচ ও টেস্টিং সল্ট দিয়ে মাখতে হবে। এবার ব্যাটারের মিশ্রণে আলতোভাবে মিশিয়ে কিমা পাকোড়া ডুবোতেলে ভাজতে হবে।
চিলি চিজ ফ্রাই: পনির লম্বা করে কেটে নিতে হবে। অল্প জিরার গুঁড়া দিয়ে মাখতে হবে। এবার কাঁচা মরিচ ও পনির একসঙ্গে ব্যাটারের মিশ্রণে ডুবিয়ে ভাজতে হবে।
কুমড়ার ফুলুরি: মিষ্টিকুমড়া চাক করে কেটে লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে। এবার ‘ক’-এর মিশ্রণে চুবিয়ে ডুুবোতেলে ভাজতে হবে।
পিঁয়াজু: ব্যাটারের মিশ্রণে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা মিশিয়ে ডুবোতেলে পিঁয়াজু ভাজতে হবে।
বেগুনি: ব্যাটারের মিশ্রণে বেগুন লম্বা লম্বা করে কেটে ভাজতে হবে।

পুষ্টি প্লেট
উপকরণ: আপেল দুই রকম টুকরা করা (লাল-সবুজ) প্রয়োজনমতো, আঙুর প্রয়োজনমতো, মালটা প্রয়োজনমতো, টুকরা করা আনারস প্রয়োজনমতো, পাকা আমের টুকরা প্রয়োজনমতো, গাজর সেদ্ধ লম্বা টুকরা করা ২টি, আলু সেদ্ধ লম্বা টুকরা করা ২টি।
দইয়ের মিশ্রণের জন্য: পানি ঝরানো দই ১ কাপ, তেঁতুলের চাটনি ২ টেবিল-চামচ, ধনেপাতার কুচি ২ টেবিল-চামচ, লবণ বা চিনি স্বাদমতো, চাট মসলা ১ টেবিল-চামচ।
প্রণালি: দইয়ের সঙ্গে সব উপকরণ মিলিয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা করে নিতে হবে। আপেল টুকরা করে স্বাদমতো লেবুর রস, চাট মসলা ও ধনেপাতার কুচি দিয়ে মেখে ফ্রিজে রাখতে হবে। আঙুর ধুয়ে পরিষ্কার করে ফ্রিজে রাখতে হবে। আনারস টুকরা করে চাট মসলা দিয়ে মেখে ফ্রিজে রাখতে হবে। গাজর ও আলু সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে চাট মসলা ও ধনেপাতা মেখে নিতে হবে। মালটা ও আম পরিবেশনের আগে আগে কাটতে হবে। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। ইফতারের টেবিলে এই পুষ্টি প্লেট সবার অনেক প্রিয়।
 লোক বুঝে ফল কাটতে হবে।  অন্য ফলও পরিবেশন করা যাবে।  যেকোনো বিন সেদ্ধ দেওয়া যাবে।

গুড়-তেঁতুলের শরবত
উপকরণ: গুড় ১ কাপ (আখের গুড়), তেঁতুল গোলা আধা কাপ, পানি (ঠান্ডা পানি) ১ লিটার, বরফ পরিমাণমতো, লেবু পাতা ৪-৫টি।
প্রণালি: গুড় ও তেঁতুল ২ কাপ পানিতে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৪ ঘণ্টা পর গুড় ও তেঁতুল খুব করে চটকে তারের চালনিতে ছেঁকে নিতে হবে। গুড় ও তেঁতুলের মিশ্রণ এর সঙ্গে পানি মিলিয়ে রাখতে হবে। ফ্রিজে শরবত ঠান্ডা করে বরফ দিয়ে পরিবেশন। এই শরবত শরীর ঠান্ডা রাখে। গুড়/তেঁতুল ভেজানোর সময় লেবু পাতা টুকরা করে দিয়ে রাখতে হবে।

বাচ্চা জিলাপি
উপকরণ: ময়দা ২ কাপ, চিনি ৪ কাপ, পানি পৌনে এক কাপ (ময়দার জন্য), পানি ২ কাপ (সিরার জন্য), খাবার সোডা আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল প্রয়োজনমতো (ভাজার জন্য), ঘি ২ টেবিল-চামচ, বেসন ২ টেবিল-চামচ।
প্রণালি: ময়দা পানি দিয়ে মাখিয়ে চুলার পাশে ঢেকে রেখে দিতে হবে এক দিন। সিরা চুলা থেকে নামিয়ে এতে ঘি দিতে হবে। চিনি ও পানি দিয়ে সিরা বানাতে হবে একটু ঘন করে। এবার মাখানো ময়দার সঙ্গে খাবার সোডা ও বেসন মেশাতে হবে। মোটা কাপড় ২-৩ ভাঁজ করে সেলাই করে মাঝখানে ছিদ্র করে জিলাপি দেওয়ার মতো কোন বানাতে হবে। তেল গরম করে ছোট ছোট জিলাপি বানিয়ে বাদামি করে ভেজে ঠান্ডা সিরায় ডোবাতে হবে। জিলাপিগুলো এক মিনিট সিরায় রেখে তুলে নিতে হবে। তৎ ক্ষণাৎ জিলাপি বানাতে চাইলে এই ময়দায় পৌনে এক চা-চামচ হাইড্রোজ মেশাতে হবে। খুব ভালোভাবে মাখাতে হবে ও খাবার সোডা মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জিলাপি বানিয়ে আগের তৈরি সিরায় ডোবাতে হবে।

মুরগির পাকোড়া
উপকরণ: মুরগি (ছোট টুকরা) ১ কেজি, ময়দা ১ কাপ, ধনেপাতা ৪ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজ মোটা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল-চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল-চামচ, লবণ প্রয়োজনমতো, সয়াসস ২ টেবিল-চামচ, কালিজিরা ১ চা-চামচ।
প্রণালি: মুরগি লবণ, কাঁচা মরিচ ও সয়াসস দিয়ে ৩০ মিনিট মেরিনেট করে রাখতে হবে। এবার বাকি সব উপকরণ দিয়ে মাখিয়ে ডুবোতেলে এক টুকরা করে সব মসলাসহ ভাজতে হবে বাদামি করে।

গ্রিন জিনজার টি
উপকরণ: গ্রিন টির টি-ব্যাগ ৩টি, পানি (ফুটন্ত) ৩ কাপ, আদার রস ৩ চা-চামচ, লেবুর রস স্বাদমতো, চিনি স্বাদমতো, বরফ কিউট প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: ফুটন্ত পানিতে টি-ব্যাগ ৫ মিনিট ভিজিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। গ্লাসে চিনি, লেবুর রস, আদার রস ৪-৫ টুকরা বরফ নিয়ে ঠান্ডা করে রাখা লিকার ঢেলে পরিবেশন। এই চা হজমের জন্য খুব ভালো।

আমড়ার শরবত
উপকরণ: আমড়া (আস্তটা ছিলে টুকরা) ২ কাপ বা ৭টি, পানি ৩ কাপ, চিনি ১ কাপ, লবণ সিকি চা-চামচ, লেবুপাতা ২টি, গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ২-৩টি, ১টি লেবুর রস, পুদিনাপাতা ১০-১৫টি, পরিবেশনের সময় গ্লাসে অনেকটা বরফ।
প্রণালি: ব্লেন্ডারে আমড়া, পানি, চিনি, লবণ, পুদিনাপাতা, লেবুপাতা, কাঁচা মরিচ ও লেবুর রস খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে। এই মিশ্রণ অনেক ঠান্ডা করে বরফ দিয়ে পরিবেশন।

ফলের ঠান্ডাই
উপকরণ: কলা ২টি টুকরা করা, খেজুর ৮টি টুকরা করা (বিচি ফেলে দিতে হবে), দুধ ২ গ্লাস (ঠান্ডা), পাকা পেঁপে ১ কাপ (টুকরা করা), চিনি ২ চা-চামচ, বরফ প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: ব্লেন্ডারের জগে দুধ, কলা, খেজুর, পেঁপে, চিনি ও বরফ নিয়ে খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন। এই ঠান্ডাই প্রচুর শক্তি দেয়। তাই সারা দিন রোজা রেখে এটা খুবই উপকারী। এই রেসিপিতে থাই পেঁপে হলে ভালো হয়।