কয়েকদিন আগে একটা গ্রোসারির মিট সেকশনে গিয়ে চারটে গরুর পা দেখে, দাম জিজ্ঞেস করে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাই! স্ত্রীর মুখের হালচাল দেখে পায়া চারটে কিনে ফেলি। প্রতি পিস ৬০/- টাকা (পরের সপ্তাহে গিয়ে দেখলাম প্রতি পিস ৭০/-টাকা)। সেদিন রাতেই স্বামী স্ত্রী মিলে রান্নায় নেমে গেলাম! আমার স্ত্রী এই নেহারি আগেও কয়েকবার রান্না করেছেন, কিন্তু আমার দেখা হয় নাই। আমি শিখে গেলাম। আমার মা মাঝে মাঝে নেহারি রান্না করতেন, সেই স্বাদ ও রং আমার চোখে এখনো লেগে আছে।
গরুর পা গুলো সাইজ মত টুকরা টুকরা করে কেটে ভাল করে ধুয়ে একটা বড় কড়াইয়ে নিন। সামান্য লবণ ও তেজপাতা দিয়ে ডুবো পানিতে ভাল করে জ্বাল দিতে থাকুন। (আমি গ্রোসারি থেকেই পিস করে নিয়েছিলাম)
জ্বাল দেয়ার এক পর্যায়ে এমন দেখাবে। আমার স্ত্রী জানালেন, পায়া জ্বাল দিলে শেওলার মত সবুজ/কালছে কিছু ময়লা বের হয়। তখন চামচ দিয়ে তা ফেলে দিতে হবে এবং এক পর্যায়ে পানি কমে গেলে আরো কিছু পানি দিতে হবে।
জ্বাল চলতে থাকুক। ফাঁকে আপনি মশলা নিয়ে মাঠে নামুন! নিম্নের লিষ্ট অনুসারে মশলা সমূহ এক বাটিতে করে ফেলুন। চারটি গরুর পায়ার জন্য এমন অনুপাতে হতে পারে।
হলুদ - আধা চামচ
মরিচ - আধা চামচ
আদা - ২ চামচ
পেঁয়াজ - ৩ চামচ
রসুন - ২ চামচ
জিরা - ১ চামচ
ধনে গুড়া - ১ চামচ
কাঁচা মরিচ - ৬/৭ টা
(আমরা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচ গাইন্ড করে নিয়েছি)
তেজপাতা - ৩/৪ টা (আগে ব্যবহার হয়েছে)
এলাচ - ৪/৫ টা
দারুচিনি - ৪/৫ টুকরা
তেঁতুল - আধা কাপ
লবণ - পরিমান মত (শেষ বারে লবণ দিতে মনে রাখবেন, প্রথমে একবার দেয়া হয়েছিল)
পেঁয়াজ কুচি - বেরেস্তার জন্য
তেল - কয়েক চামচ, বেরেস্তার জন্য।
নেহারিতে মশলা কম দেয়া হয় যাতে করে ঝোল পাতলা হয় অনেকটা স্যুপের মত করার জন্য এবং তেতুলের ব্যবহার করা হয় যাতে করে ঝোল পানির মত হয়। কত অজানারে!
পায়া ভাল করে সিদ্ব (ঘণ্টা দুয়েক লাগবেই) হলে সব মশলা দিয়ে দিন। এলাচ, দারুচিনি ও তেঁতুল সহ।
আরো কিছু পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে আবার জ্বাল দিতে থাকুন। ঢাকনা দিয়ে টিভি দেখতে চলে যান।
আপনি গিয়ে কোন রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। বাংলাদেশে রান্নার অনুষ্ঠান (টিভি, সিডি, ডিভিডিতে) এবং বই লিখে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছেন সিদ্দিকা কবীর। ইটিভিতে এখনো তার অনুষ্ঠান চলে। আমি আমার অন্তরের সালাম জানাই ওনাকে। কি সবালীল ভাষায় সব কিছু বলে দেন তিনি। তার পাশে থাকা শারমীন শীলাকে দেখে আবার মেজাজ চটে যায়! খালি মাতাব্বরী! প্রথম দিকের ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন, সিদ্দিকা আপা তাকে কি করে নিয়ন্ত্রন করতেন! আমার মনে হয় শীলাকে এখনো একটা কিছু একা রান্না করতে দিলে পারবে না! আমি নিশ্চিত। চামচ ধরা দেখলেই বুঝা যায়, কে পারে!
শুধু টিভি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসতে হবে। পানি কমে গেলে আবার পানি দিতে হবে। যতক্ষন না সব কিছু আপনার মনের মত হচ্ছে। লবণ দেখুন, লাগলে দিন।
অন্য একটা কড়াইতে তেল ঢেলে পেঁয়াজ কুচি ভাজে নিন। বেরেস্তা বানান।
পায়ায় বেরেস্তা দিয়ে দিন (বাগার মারুন) এবং আরো কিছু ক্ষন জ্বাল দিন।
ব্যস হয়ে গেল, সুস্বাদু নেহারি।
রেসিপেটি লিখেছেনঃ সাহাদাত উদরাজী (বাংলাদেশ থেকে )