Friday, October 15, 2010

শারদীয় দুর্গাপূজার নাড়ু তকিত লাড্ডু


শারদীয় দুর্গাপূজার পাশাপাশি লক্ষ্মীপূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। নাড়ু, তকিত, লাড্ডু বানানো শুরু হয়।’ বললেন জ্যোত্স্না বিশ্বাস। একাধারে তিনি যাত্রা অভিনেত্রী, লেখক, নির্দেশক এবং অমলেন্দু বিশ্বাস কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারপারসন।
সেই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি মা-মাসিদের দেখেছেন এ পূজার জন্য প্রস্তুতি নিতে। শারদীয় উত্সব শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয়ে যেত লাড্ডু, মোয়া ইত্যাদি তৈরির আয়োজন।কলার গাছের ঢোঙল বা খোল কেটে তাতে খাবার দেওয়া হতো। ‘এখন তো শহরে সেভাবে খুব আয়োজন করতে দেখা যায় না। সময় কই মানুষের?’ বললেন তিনি।
‘আসলে মা-মাসীদের কাছ থেকেই লক্ষ্মীপূজার প্রসাদ তৈরি করতে শিখি। তবে এ জন্য প্রয়োজন হয় অনেক রকমের আয়োজনের। এই আয়োজন করতেও সময় লেগে যায়। এ জন্য শারদীয় পূজা শুরুর সময় থকেই আমি লক্ষ্মীপূজার প্রস্তুতি নিতে থাকি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে এবার খুব বড় পরিসরে আয়োজন করতে পারব না। কারণ, লোকজন আগেভাগেই ছুটি নিয়ে চলে গেছে। তার পরও নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকেই আয়োজনটা করেছি।’ বলছিলেন জোত্স্না বিশ্বাস।

রসকড়া
উপকরণ : আধা কেজি কাঁচা মাষ কালাইয়ের ডাল, আধা কেজি চিনি, বেশম।
প্রস্তুত প্রণালী : পানিতে চিনি গুলিয়ে ঘন সিরা করে নিতে হবে। সিরা চুলো থেকে নামিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর ডালটাকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পানি ছেঁকে নিয়ে শিলের পাঠায় মিহি করে বেটে নিতে হবে। ডাল বাটা হলে তাতে সামান্য কিছু বেসন মিশিয়ে নিয়ে ডোবা তেলে গোল গোল করে ভেজে নিতে হবে। এবারে গোল গোল ভাজা ডালের বড়াগুলো সিরায় ছেড়ে দিতে হবে। এমনি করে রসকড়া তৈরি হবে।

নারকেলের নাড়ু
উপকরণ: দুটি নারকেল, আধা কেজি চিনি অথবা আধা কেজি গুড়, এলাচ গুঁড়ো, তেজপাতা ও আধা কেজি গুঁড়ো দুধ।
প্রস্তুত প্রণালী: নারকেল কুরিয়ে নেব। এরপর দুধ, কোরানো নারকেল, চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে কড়াইয়ে চড়িয়ে দেব। সঙ্গে থাকবে তেজপাতা এবং এলাচ গুঁড়ো। এরপর কড়াইয়ে ভাজতে হবে। যখন বাদামি রঙের আকার ধারণ করবে, তখনই কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে তেজপাতা ফেলে দেব। তারপর গরম থাকতে থাকতে হাতে তুলে নেব নারকেলের খামির। গোল গোল করে তৈরি করব নাড়ু। হয়ে গেল নারকেলের নাড়ু।

তকিত
উপকরণ: ২৫০ গ্রাম ছানা, দুটো নারকেল, পরিমাণমতো চিনি ও এলাচ দানা।
প্রস্তুত প্রণালী: নারকেল কুরিয়ে নিতে হবে। এরপর ছানা, চিনি ও কোরানো নারকেলের অংশ নিয়ে কড়াইয়ে ছেড়ে দিতে হবে। ২৫ মিনিট চুলোয় থাকবে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে বিভিন্ন আকৃতির তকিত তৈরি করা যাবে। কেউ করে গোল গোল আকৃতির আবার কেউ করে চৌকোনা আকৃতির। কেউ বা ঘুড়ির মতো করে তৈরি করে তকিত।

চিঁড়ার নাড়ু
উপকরণ: আধা কেজি চিঁড়া, আধা কেজি চিনি, ঘি অথবা ডালডা ও পানি।
প্রস্তুত প্রণালী: চিঁড়া প্রথমে ডালডা অথবা ঘি দিয়ে হাল্কা করে ভেজে নেব। এরপর পানিতে চিনি গুলিয়ে সিরা করে নেব। সিরা চুলায় জ্বাল করে নেব। চিনির সিরা যখন ঘন হয়ে আসবে, তখনই ভাজা চিঁড়া চিনির সিরায় ছেড়ে দেব। এরপর সিরায় মিশ্রিত চিঁড়া দিয়ে ছোট ছোট নাড়ু বানিয়ে নেব। হয়ে গেল চিঁড়ার নাড়ু।

নিরামিষ
উপকরণ: আলু, বেগুন, মুলা, পটল, মিষ্টিকুমড়া. ফুলকপি।
প্রস্তুত প্রণালী: চুলায় তেল দিয়ে তেজপাতা, কালো জিরা, মরিচ দিয়ে ভেজে নিতে হবে। এরপর সব সবজি এক করে তাতে হলুদ বাটা দিয়ে মেখে নিতে হবে। তেলটা গরম হয়ে গেলে তাতে সবজি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর প্রয়োজনমত আদা বাটা, জিরার গুড়া ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে দিতে হবে। সেদ্ধ হওয়ার পর সেগুলো নামিয়ে আবার চুলায় তেল দিয়ে দুটো শুকনো মরিচ ছেড়ে দিয়ে তাতে সেদ্ধ তরকারি ছেড়ে দিতে হবে। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেব। হয়ে যাবে নিরামিষ।

লাড্ডু
উপকরণ: একটা নারকেল, বেসন, চিনি, ঘি অথবা তেল।
প্রস্তুত প্রণালী : নারকেল কুরিয়ে নিতে হবে। এরপর কোরানো নারকেলের সঙ্গে বেসন মাখিয়ে নিয়ে গরম কড়াইয়ে ঘি অথবা তেলের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। এগুলো ভাজা হয়ে গেলে, সামান্য পানিতে চিনি ছেড়ে বেশ ঘন রস করে নিতে হবে। এবারে সেই চিনির রসের মধ্যে বেসন দিয়ে ভাজা নারকেল মিশ্রণ করে নেব। তারপর হাত দিয়ে তৈরি করব মজার লাড্ডু। চিনির রসটা এমনভাবে করতে হবে যেন ভাজা নারকেল রসের সঙ্গে মেশানোর পর তা জমাট বেঁধে যায় এবং অবশিষ্ট কোনো রস না থাকে।

লেখকঃ কামরুজ্জামান
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো